নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৪:

কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। অথচ উৎপাদন হচ্ছে ৩ হাজার মেগাওয়াটের কম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, ডলারের সংকট ও দরপত্র জটিলতায় কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে ৭টি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ আছে দুটি। আর চারটিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।


পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেই কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দিকে যায় গত আওয়ামী লীগ সরকার। সময়মতো এসব কেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি। আবার উৎপাদনে আসার পর নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। বকেয়া বিল জমতে থাকায় চাপে পড়েছে এসব কেন্দ্র। ধাপে ধাপে বিল পরিশোধ বাড়াচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।


বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, তাপমাত্রা একটু কম থাকায় এখন বিদ্যুৎ চাহিদা তুলনামূলক কম। রাতে সর্বোচ্চ চাহিদা হচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। কয়লা থেকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়তি খরচে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গতকাল রোববার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।


নিজস্ব কয়লায় চালিত একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিট মিলে সক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এটি নিজস্ব খনির কয়লা দিয়ে চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার অভাবে দুটি ইউনিট অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। বর্তমানে একটি ইউনিট বন্ধ। আর বাকি দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট। পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন করতে দিনে পাঁচ হাজার টন কয়লা দরকার। যদিও চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ করতে পারে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। এর বাইরে বাকি ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হয় আমদানি করা কয়লা থেকে। আমদানির ডলার জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে পিডিবি।


কয়লা–সংকটের কারণে গত ৩১ অক্টোবর থেকে পুরোপুরি বন্ধ আছে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুটি ইউনিট মিলে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার পুরোপুরি উৎপাদনে ফিরতে পারে আগামী মার্চে। এর মধ্যে আগামী মাসের শুরুতে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, কয়লা আমদানি না হওয়া পর্যন্ত এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে।


কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, কয়লা আমদানির দরপত্র নিয়ে জটিলতা আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় আমদানিতে দেরি হয়ে গেছে। এক বছরের জন্য ৩৫ লাখ টন কয়লা সরবরাহে ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। মাসে প্রায় তিন লাখ টন কয়লা লাগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ ছাড়া গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ইউনিট ও চলতি বছরের ২৮ আগস্ট দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বিল পায়নি এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। তাদের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) না হওয়ায় বিল পরিশোধ করা যায়নি। শিগগিরই এ চুক্তি হতে পারে।


এর বাইরে বরগুনার আমতলী এলাকার ৩০৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ আছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে এটি বন্ধ করা হয়। পুনরায় উৎপাদনে ফিরতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।